মন কখনও বাস্তবে বসবাস করতে চায় না।
বাস্তবতা বড় কঠিন। শুধু কঠিন বলবে ভুল হবে, বাস্তবতা সাপোর্টিভ না। সব সময় বাধা দেয়,
কষ্ট দেয়, সামনে আগাতে দেয় না। আর তাই মন একটু আরাম পাওয়ার আশায়, একটু সুখ লাভ করার
আশায় ফ্যান্টাসিতে প্রবেশ করে। কিন্তু এই ফ্যান্টাসির জগত তার জন্য এক সময় বাধা আর কষ্ট
হয়ে দাঁড়ায়। তখন বাস্তবতা তার কাছে ফ্যান্টাসি হয়ে যায়। আর ফ্যান্টাসি
হয় তার বাস্তবতা। এজন্য
ফ্যান্টাসি আর বাস্তবতাটা বোঝা খুব জরুরী।
আসুন বাস্তবতার জগত থেকে একটু ফ্যান্টাসির জগত থেকে ঘুরে আসি।
শ্রাবণ/শ্রাবন্তী (কাল্পনিক) জীবনে বড়
কিছু করতে চায়। স্বপ্ন দেখে নিজে একটা উদ্যোগ নিবে। এক সময় বড় কোম্পানির কর্ণধার হবে।
সে চাকরি করবে না। চাকরি দিবে। এ স্বপ্ন তার স্নাতক পর্যায় থেকে। এখন সে স্নাতকোত্তর
শেষ করে বসে আছে। প্রতিদিন সে স্বপ্ন দেখছে- সিইওর চেয়ারে বসে সবাইকে লিড দিচ্ছে। তার
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শ্রেষ্ঠ হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে পরপর চারবার। সে পেয়েছে তরুণ উদ্যোক্তার
স্বীকৃতি। ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথ কিংবা আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট খলিফা বিন জায়েদ
বিন সুলতান আল নাহিয়ান তার সাথে হাস্যোজ্জ্বলভাবে করমর্দন করছেন। তার মুখটা হাসিতে
ভরে যায়। আর এদিকে মায়ের ডাকে তার হুস ফেরে। বেজার মুখে ডাক দেয়- “কী ডাকো কেন? দিলা
তো সুন্দর মুহূর্তটা নষ্ট করে”।
আব্দুল্লাহ/মায়মুনাহ (কাল্পনিক) বড় আবেদ/আল্লাহর
নিকটবর্তী বান্দাহ হওয়ার স্বপ্ন দেখে। দুনিয়াটা তার কাছে ঘৃণার বস্তু। মাঝে মাঝে সে
ভাবে- কেন আল্লাহ্ দুনিয়াতে পাঠালো? জান্নাতে দিব্যি কেটে যেতো অনন্তকাল। শুধু আল্লাহর
ইবাদত করে কাটাতাম। ফেরেশতাদেরকেও হারিয়ে দিতাম ইবাদতের প্রতিযোগিতায়। আমিই হতাম আল্লাহর
সবচেয়ে প্রিয়। এই কথা ভাবে আর সময় গড়িয়ে যায়। প্রিয় বান্দাহ হওয়ার স্বপ্নে আল্লাহর
আদেশ/নিষেধ করা বিষয়গুলো বাদ পড়ে যায় অনেক সময়। কিন্তু তাতে মন বিচলিত হয় না। কারণ
সে প্রিয় বান্দাহ হওয়া স্বপ্নে বিভোর! তার প্রতিবেশি কৃষি কাজ করে, অনেক সময় মসজিদে
যেতে পারে না। বাড়িতে কিংবা মাঠেই নামাজ পড়ে নেয়। খাটে আরাম করতে করতে জানালা দিয়ে
তাকায় আব্দুল্লাহ/মায়মুনাহ। সেখানে দেখতে পায় কৃষককে কৃষি কাজ করতে। এটা দেখে আর মনে
মনে বলে দুনিয়াবি কোথাকার! সব কিছু বাদ দিয়ে শুধু আল্লাহর ইবাদত করবে তা না, কৃষি কাজ
করছেন উনি! হঠাৎ আসরে আজান শুনতে পায় সে। হায়রে! জোহরের নামাজ পড়তেই যে মনে নেই ধ্যানের
কারণে! সব দোষ ঐ কৃষকের!
এবার আসুন বাস্তবে!!!
গল্প দুটি ভালো লেগেছে কী? আচ্ছা বলুন
তো, গল্প দুটিতে অসঙ্গতি কোথায়? স্বপ্ন দেখা তো খারাপ কিছু না। কিন্তু স্বপ্নকে বাস্তবায়ন
না করাটা কতটা ঠিক সেটা আপনারাই বিচার করবেন। এই গল্পের জায়গায় আমি আমাকে বসালাম, আপনি
আপনাকে বসান। আর ভাবুন। কোথায় ভুলটা হচ্ছে।
শ্রাবণ/শ্রাবন্তী যদি তার স্বপ্ন অনুযায়ী
স্নাতক পর্যায়ে ক্যারিয়ার ক্লাব কিংবা উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন কর্মশালা সেমিনারে
অংশগ্রহণ করতো তাহলে স্নাতক/স্নাতকোত্তর শেষ করার পর সে কী করবে তার একটা ধারণা হতো।
এরপর তারা সে অনুযায়ী কাজ করতে পারতো। আরো বুদ্ধিমানের কাজ হতো- তারা যে বিষয়ক উদ্যোগ
নিতে চায় সে ব্যবসাটার ধরন তাদের বোঝা। ঐ সেক্টরে চাকরি করেও অভিজ্ঞতা অর্জনের বিষয়টাও
খারাপ না। এতে তারা আরো নতুন আইডিয়া পেতো। আর অন্যদিকে ম্যানেজমেন্টের দক্ষতা তাদের
তৈরি হতো। এতে তারা ভবিষ্যতে একজন ভালো বস হতে পারতো। অন্যের কষ্টটা বুঝতে হলে নিজেতো
আগে সে কষ্টের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। নাহলে ব্যবসায় নামার পর প্রতি পরতে পরতে ভুল হবে।
পরিশেষে মনে হবে- “আমার স্বপ্নটাই ভুল ছিল”।
আব্দুল্লাহ/মায়মুনাহ আল্লাহর প্রিয় বান্দাহ
হতে চায়। এর চেয়ে ভালো চাওয়া আর হতে পারে না। লিটারেলি, যে যাই বলুক। এটাই প্রত্যেক
মুসলিম/মুমিনের জন্য চরম স্বার্থকতা। কিন্তু এই চরম স্বার্থকতার রূপটা বুঝতে হবে। আল্লাহর
সবচেয়ে প্রিয় বান্দাহ ছিলেন হযরত মুহাম্মাদ (সা.)। তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ কখনো আসেনি, নেই
এবং আসবেও না। তার জীবন, সাহাবীদের জীবন, অলি আল্লাহদের
জীবন কেমন ছিল তা জানার প্রয়োজন আছে।
তারা যেমন ইবাদত করেছেন তেমনি সংসারও করেছেন।
তাদের ইবাদতে ফ্যান্টাসি ছিল না। তারা এমন ইবাদত করতেন যে পা ফুলে যেতো টের পেতেন না।
শরীর থেকে তীর বের করা হতো টের পেতেন না। দুই রাকায়াত নফল নামাজে রাত পার করে দিতেন।
আবার দিন হলে স্বাভাবিক নিয়মে এই জগত সংসার পরিচালনা করতেন। নিজেরা কাজ করে উপার্জন
করতেন। কখনও অন্যের ভরসায় বসে থাকতেন না। অলসতা করতেন না, অন্যের কাজ ছোট করে দেখতেন
না। দুনিয়াকে তারা ছেড়ে দেননি তবে দুনিয়াকে আপনও করেননি। দুনিয়াতে বসে তারা আখিরাতের
ফসল বুনেছেন। আমার আপনার তাই করা উচিত।
ফ্যান্টাসির জগত- অলসতার জগত। যত আগে আমরা বের
হতে পারবো ততই আমাদের জন্য ভালো।
Comments
Post a Comment