তিনি
দেশ সেরা বোলার কিনা তা বিতর্কের বিষয়। ব্যাটিংয়ের মূল স্তম্ভও তিনি নন। তিনি শুধু বল করার সময় বল
করেন। মাঝে মাঝে দু একটা উইকেট পান। কখনো রান কম
দেন, কখনও বা বেশি। ব্যাটেও মাঝে মাঝে দু একটা ছক্কা দেখা যায়।
কি
এমন করেন তিনি! দলে তার প্রয়োজনটাই বা কি? তিনি না থাকলে এমনকি ক্ষতি দেশের
ক্রিকেটের? মাশরাফি সমোলচদের এ প্রশ্নগুলো থাকতেই পারে। কিন্তু তবুও তিনি
বাংলাদেশের কোটি মানুষের ভালোবাসার, আবেগের বস্তু!
ইনজুরিকে
সাথে নিয়ে চলেন তিনি। পড়ে যান আবার উঠে দাঁড়ান। টিমের সদস্যদের সাথে করে নিয়ে চলেন
তিনি। সবাইকে সাথে নিয়ে দাঁড়ান, বিপদের ঢাল হয়ে দাঁড়ান। টিমমেটের ব্যথায় কাঁদেন
তিনি। আর তার ব্যথায় কাঁদেন সবাই।
তাকে
ভালোবেসে প্রেমিকরা ডাকে ‘ম্যাশ’, ‘বস’ কেউবা ডাকে ‘গুরু’। এতো ভালোবাসা কোথায়
পেলেন তিনি? কি এমন তার জাদু? কেন মাশরাফি বলতে পাগল বাংলাদেশের সব ক্রিকেট
ভক্তরা? আর তিনিই বা কেন পাগল তার ভক্তদের?
পথ
পরিক্রমায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বেশ অনেক ক্রিকেটারকেই পেয়েছে তাদের অধিনায়ক হিসেবে।
কিন্তু অধিনায়কের জন্য তার টিমমেট থেকে শুরু করে সারা দেশব্যাপী এমন ভালোবাসা
বোধহয় আর কেউ পাননি তা হফপ করেই বলা যায়। মাশরাফি, কোন জিনিস দিয়ে সৃষ্টি তুমি!
এই
আবেগ তৈরিটা এমনি এমনিতেই হয়নি। ক্রিকেটার হিসেবে তার সফলতা, অধিনায়ক হিসেবে সফলতা
এর ভিত তৈরি করেছে। অধিনায়ক হিসেবেও তিনি সফল, ক্রিকেটার হিসেবেও তিনি সফল।
অধিনায়ক
হিসেবেই ধরি, টেস্ট ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি মিলে মোট ৪৫টি ম্যাচ খেলা হয়েছে তার। এর
মধ্যে টেস্টের মাত্র একটি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন তিনি। এতে তিনি ইনজুরিতে পড়লে
অধিনায়কত্ব বতলায় সাকিবের উপর। তবে খাতা কলমে তিনিই ছিলেন ক্যাপটেন। সে ম্যাচটি
বাংলাদেশ জিতে।
টি-টোয়েন্টিতে
মোট ১৩টি ম্যাচে তিনি অধিনায়কত্ব করেন। তার মধ্যে ৪টিতে তার দল জিততে সক্ষম হয়। আর
হারে ৯টিতে। তবে তার আসল কারিশমা ওয়ানডে ফরম্যাটে। মোট ৩১টি ম্যাচে অধিনায়কের
দায়িত্ব পালন করেন মাশরাফি। এর মধ্যে ২২টি ম্যাচে জয়লাভ করেন তিনি। আর হারেন ৯টি
ম্যাচে। জয়ের হার আপনারাই হিসেব করে নিন।
এবার দেখা যাক তার ক্যারিয়ার রেকর্ড
ফরম্যাট
|
ম্যাচ
|
রান
|
উইকেট
|
সেরা ব্যাটিং/ বোলিং
|
ওয়ানডে
|
১৮৭
|
১৬১৬
|
২৩৮
|
৫১*/
২৬-৬
|
টেস্ট
|
৩৬
|
৭৯৭
|
৭৮
|
৭৯/ ৬০-৪
|
টি-টোয়েন্টি
|
৫৪
|
৩৭৭
|
৪২ |
৩৬/
১৯-৪
|
সর্বমোট
|
২৭৭
|
২৭৯০
|
৩৫৮
|
----------
|
ওয়ানডের
ব্যাটিং আর বোলিং হিসেব করলে তিনি একজন পুরোদস্তর অলরাউন্ডার। ওয়ানডের আদিকাল থেকে
এ পর্যন্ত ১০০০ রান করা এবং ১০০ উইকেট পাওয়া ক্রিকেটার কেবল মাত্র ৬০ জন। এর মধ্যে
বাংলাদেশের ৩ জন। মাশরাফি ছাড়া ৩ জনের অন্য দুজন হলেন- মোহাম্মাদ রফিক ও সাকিব আল
হাসান।
আবার
আসি আবেগের স্থানে। ক্রিকেট পাগল জাতি বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশের জাতীয় খেলা ক্রিকেট
নয়। পাগল হওয়ার কারণ সফলতাই। ক্রিকেট দিয়েই স্পোর্টসে বাংলাদেশের নাম বিশ্বে ছড়িয়ে
গেছে। বাংলাদেশের তারকা তাই ক্রিকেটাররাই।
আর
এ তারকাদের তারকা হলেন মাশরাফি। আসলে তারকা বললে মাশরাফির নামের সাথে অবিচার করা
হবে। তিনি ক্রিকেট পাগল এ জাতির এমন এক পর্যায়ে চলে এসেছেন যে তাকে গুরু বা গ্রেট
লিডার নামেই বেশি মানায়।
এই
গ্রেট লিডার পর্যায়ে পৌঁছেছেন বলেই বাংলাদেশের মানুষ তার জন্য এতো পাগল। মাশরাফির
জনপ্রিয়তা এজন্য মাপা যায় না ফেসবুকের লাইকে, তার পারফর্মেন্সে। তিনি পৌঁছে গেছেন
মানুষের আবেগের স্থান হৃদয়ে।
আর
কতোদিন তিনি বাংলাদেশকে সার্ভিস দিতে পারবেন তা জানে না কেউ। তবে বয়স আর ইনজুরির
দিকে তাকালে হয়তো বছর তিন-চারেক কিংবা তার চেয়েও কম। তিনি অবসর নেওয়ার পর কি যে
করবে এ ক্রিকেট পাগল জাতি তাও জানে না কেউ।
তবে
আমরা একটা কথা নিঃসন্দেহে বলতে পারি, তার বিদায়টা হবে শচীন টেন্ডুলকারের বিদায়ের
চেয়েও আরো কষ্টদায়ক, আরো বেদনার। এমন
একজন গ্রেট লিডার, এমন একজন ভালোবাসার মানুষ, এমন একজন বন্ধুসুলভ দরদি অধিনায়ক আর
বাংলাদেশ পাবে কিনা তা সময়ই বলে দিবে।
তবে
তার আগ পর্যন্ত মাশরাফি থাকবেন কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে, টিমমেটদের চিন্তা চেতনায়-
তাদের ব্যাটিং ও বোলিংয়ে। নতুন কোনো মাশরাফির আগমন ঘটলেও মাশরাফি থাকবেন মাশরাফির
জায়গায়। যে আসবেন তিনি হয়তো নিজেকে ‘দ্বিতীয় মাশরাফি’ পরিচয় দিতেই গর্ববোধ করবেন।
কারণ
মাশরাফি শুধু নাম নয়, একজন কিংবদন্তি। যে স্থানে তিনি পৌঁছেছেন সে স্থানে পৌঁছাতে
পারেননি আর কোন দেশের কোন খেলোয়াড় কিংবা অধিনায়ক। একটি দেশের আবেগ বোঝাতে মাশরাফির
উপমাই যথেষ্ট। কারণটা আর কিছু নয়, বাংলাদেশের আবেগের অপর নামই যে মাশরাফি।
বিঃদ্রঃ- আমার এ লেখাটি বিডিইয়ুথ.কমে প্রকাশিত হয়েছিল। এটার কপিরাইট তাদেরই। আমি শুধু পোর্টফোলিও তৈরির জন্য অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করছি।
Bangla Short Film