রাত
পোহাবে, ভোর হবে। পাখি কিচির-মিচির
করবে। আমাদেরও ঘুম ভাঙবে। সন্ধ্যা তারা, চাঁদের মায়ায় দিন
শেষ হবে। পাখির মত আমরাও নিড়ে ফিরবো। এটাই প্রকৃতির রূপ।
পড়তে পড়তে এক রকম ভাললাগা কাজ করছে, তাই না? এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সবক্ষেত্রে তা কি হয়? এই
দিনেই কখনো মুষলধারে বর্ষা হয়। কখনোবা রাতে কালবৈশাখীর ঝড় বয়ে যায়। প্রকৃতি যেমন
সুন্দর, তেমনই রুক্ষ।
এ
বিপরীতমুখিতা আমাদের জীবনেও লক্ষ্য করা যায়। আজকের দিন খুব ভাল কাটতে পারে আবার
নাও পারে। শীত না থাকলে কাঁথার মর্ম কেই বা বুঝতো।
বিরানি না থাকলে আলু-ভর্তা ডাল বা শাক-মাছের মজা বুঝা
যেতো না। আবার এগুলো না থাকলে প্রতিদিন বিরানি খেতে আপনারও ভালো লাগতো না। টম না থাকলে জেরির কোন মজা থাকতো না। তেমনই
আমাদের জীবনের একটা দিক হলো নিরাশা। একে
ছাড়া জীবনের কোন স্বাদ নেই।
একটা
সময় আসে যখন কিছুই ভাল লাগে না। শুধু হতাশা ঘিরে ধরে।
বিশেষজ্ঞদের
মতে, হতাশা উৎপত্তি হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। এদের মধ্যে
৩টি প্রধান উপাদানকে তারা বের করতে সক্ষম হয়েছেন। কোন কিছুর সাথে অন্তর্ভূক্তি,
কর্তৃত্ব সংক্রান্ত এবং অস্তিত্বের সংকট। যখন এ তিনটির এক বা
একাধিক উপাদান হুমকির মুখে পড়ে তখনই আমরা হতাশ হই। আসুন হতাশা কিংবা নিরাশার এ রকমই কয়েকটি কারণ সম্পর্কে জেনে নেই।
নিজেকে
প্রত্যাখ্যাত বা পরিত্যক্ত মনে হওয়া:
প্রত্যাখ্যাত
বা পরিত্যক্ত হলো সে বিষয় যখন আমাদের জীবনে অন্য কারোর অন্তর্ভূক্তি খুব বেশি প্রয়োজন
হয়। এ সময়টা সে সময় যখন আমাদের মনে হয়, আহ! যদি কাউকে
জড়িয়ে ধরে কাঁদতে পারতাম! হায়! কেউ যদি আমার পাশে থাকতো,
কেউ যদি আমাকে বুঝতে পারতো! এ বিষয়গুলো
এমন যে, এ থেকে কেটে উঠতে পারা অনেক কষ্ট। কিন্তু অনেকেই
আবার পারে। বিশেষজ্ঞরা সে বিষয়গুলোও বের করেছেন। তাদের মতে, এ সমস্যার সময় অধিকাংশ ভূক্তভোগীরা একপেশে চিন্তা করে থাকেন। এজন্য
তাদের দোষারোপ করাও যায় না। কারণ, তারা জগৎটাকে অনেক ছোট মনে করে থাকেন। কিন্তু
একবার প্রত্যাখ্যাত/পরিত্যক্ত হওয়ার মানে এই নয় যে,
তার জীবন শেষ হয়ে গেল বা তাকে সবাই প্রত্যাখ্যান বা পরিত্যাগ
করবে। পৃথিবীটা অনেক বড়, কেউ না কেউ তাকে আবার গ্রহণ
করবে। এ বিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যান, হতাশা/নিরাশা আর থাকবে না।
নিঃসঙ্গ
মনে হওয়া:
“আমি
একা বড় একা, আমার আপন কেউ নেই”। এই
রকম অনুভূতির মানুষের সংখ্যা হয়তো খুব বেশি নয়। কিন্তু,
এই বড় একারা নিজেদের বড় অসহায় মনে করেন। নিজের মনের কথা, সুখ-দুঃখের কথা কাউকে বলার
জন্য মনটা ছটফট করে। কিন্তু, এতো জনঅরণ্যর মাঝেও তারা সঙ্গীহীনতায় ভোগেন। তবে একটু চারপাশে তাকালেই হয়তো তারা সঙ্গী পেয়ে যেতে পারেন। পরিবারেই
আছে মা,বাবা,ভাই,বোন। আছে কত বন্ধু। কে জানে হয়তো মনে মনে কেউ আপনাকে খুব পছন্দ করে।
আপনি খেয়াল করেননি বলেই দেখতে পাননি। এসবের পরেও যদি আপনি কোন সঙ্গী খুঁজে না পান তবে
নিজেকে কখনও নিঃসঙ্গ মনে করবেন না। নিজেকে ভালোবাসুন, সামাজিক কোন অ্যাক্টিভিটিজ এর
সাথে জড়িত হোন, ভালো কোন জায়গা থেকে ঘুরে আসুন। মনে রাখবেন কবি গুরুর কথা -“যদি
তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলোরে”।
বাঁধাপ্রাপ্ত
হওয়া:
মনে
আছে, ছোটবেলায় আমরা রচনা মুখস্ত করতাম-“ জীবনে চলতে গেলে বাঁধা আসবেই। মৌচাকের মত ঝাঁকে ঝাঁকে আসবে।(দ্বিতীয়
লাইনটা ছিল না! মনে হয়, শুধু আমিই এ রকম পড়ছি।)।” সত্যি, বাঁধা আসেনি জীবনে এমন কেউ কি আছে?
মনে হয় নেই। রেজাল্ট খারাপ হয়েছে? ভাল
কোন জায়গায় চান্স পাননি? চাকরি
পাচ্ছেন না? কোর সমাধান পাচ্ছেন না? এরকম হাজারো বাঁধা জীবনে আসে। তার থেকে উত্তোরণ পেতে গেলে ধৈর্য্য ধরতে হয় বারংবার চেষ্টা করতে হয়। সফলদের জীবনী পড়তে হয়। এতে অনেক উৎসাহ পাওয়া যায়।
অক্ষমতা:
‘হে
অক্ষম পুরুষ! তোমাকে দিয়ে কিছু হবেনা’( উক্তিটির প্রবক্তা
কে জানেন?)। শিক্ষা জীবনে বা বাসায় আমরা যে বাক্যটি বেশি
শুনি তা হল- ‘তোমাকে দিয়ে কিছ্ছু হবেনা’। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদেরকে এই শব্দটা জীবনে
বেশি বলা হয়েছে তারাই সফল হয়েছে। অবাক হওয়ার কিছু নেই। তাদের মনে একটা শব্দই
ছিল-জিদ বা দেখিয়ে দেবো। শারীরিকভাবে
অক্ষম হলেও অলিম্পিকে দৌড়াচ্ছে এমন এ্যাথলেট এখন কম নয়। তাদের জন্য স্পেশাল
অলিম্পিকও আছে। শুধু তাই নয় শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও ক্রিকেট, ফুটবল থেকে শুরু করে সর্বত্রই
তাদের চলাফেরা। পড়াশুনা করে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন, ভাল পদে চাকরি করছে এমন সংখ্যাও কম নয়। আর দুই হাত, দু-চোখ, দুই পা দিয়ে আপনি কি কিছুই করতে
পারবেন না (আপনারা পারবেন না, এটা আমার বিশ্বাস হয় না)!
সংকটপূর্ণ
সামাজিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা :
বাস্তবতা
বড়ই কঠিন (বাস্তবতা সহজ হয় নাকি!)। আমাদের সমাজের অধিকাংশরাই নানা ধরনের সংকট মোকাবেলা করে বেড়ে ওঠে। না থাকাটা যেখানে নিত্য সত্য। এ কারণে
তাদের এক ধরনের হীনম্মন্যতা তৈরি
হয়। এটা স্বাভাবিক। তবে এই হীনম্মন্যতা প্রশ্রয় দিলে হবে না। সবার সব কিছু থাকে না।
যার সম্পদ আছে, তার হয়ত স্বাস্থ্য নেই। যার সম্পদ নেই,
তার স্বাস্থ্য আছে। যে ক্লাসের খারাপ স্টুডেন্ট সে হয়তো ভাল গিটার বাজাতে জানে। যে ভাল স্টুডেন্ট সে হয়তো সবার সাথে মিশুক না। মন্দের সাথে ভালও থাকে, ভালোর
সাথে মন্দও থাকে। তাই নিজেকে প্রমাণ করতে কঠোর পরিশ্রম করুন। জয় আপনার পদতলে।
হারাবার
ভয়:
যার
আছে, হারাবার ভয় তো তারই আছে। যার নেই, তার হারাবার কিছু নেই। রোগে আক্রান্ত হয় না, এমন
মানুষ কি আছে? বড় ধরনের কোন রোগ
হয়েছে, জীবন হারাবার ভয়। বস বকেছে, চাকরি হারাবার ভয়। পেট খারাপ করেছে, খাবার ভয়।
গার্লফ্রেন্ডের ফোন বন্ধ, সম্পর্ক হারানোর ভয়। ভয় আর ভয়।
এই ভয়কেই করতে হবে জয়। আপনি পারবেনই। সাহস রাখুন, নিজের
উপর বিশ্বাস রাখুন। জানি, আপনি আপনাকে কোন কিছুকেই হারাতে দেবেন না।
আরও
এমন অনেক সমস্যা আছে যার জন্য হতাশা আসতে পারে। সমাধান হলো- নিজেকে কখনও একা থাকতে
দিবেন না, কখনও নিজেকে অবসর দিবেন
না। পরিচিত পরিবেশে থাকুন, পরিচিতজনদের সাথে থাকুন। দেখবেন হতাশা আপনাকে ছুঁতেও পারবে না।
Comments
Post a Comment