কখনও শুনেছেন গেমস
খেললে কেউ কাঁদে। আমরা নিশ্চিত আপনারা সে রকম কথা শুনেনওনি আর সে রকম গেমস
খেলেনওনি। গেমস দিবে বিনোদন, কষ্ট দিবে কেনো এরকম প্রশ্ন করতে পারেন। আপনাদের
কথাটা ফেলে দেওয়ার মতো না।
কিন্তু গেমসের কাহিনী
যদি হয় সে রকম মর্মস্পর্শী তাহলে ইচ্ছা করলেও কি আর বিনোদন লাভ করা যায়। সে রকমই
একটি গেমস হলো লাইলা অ্যান্ড দ্য শাডোস অফ ওয়ার। চলুন
না কথা না বাড়িয়ে জেনে আসা যাক এই গেমস সম্পর্কে।
গেমসের
স্টোরিটা যেমন
যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজার
একটি পরিবারে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনাই এ গেমসের মূল উপজীব্য। কিন্তু সে
পরিবারের গল্পই যেনো পুরো গাজায় ঘটে যাওয়া অমানবিক যুদ্ধের প্রতিচ্ছবি হয়ে
দাঁড়িয়েছে। গেমটির ইনট্রোটা খুবই মর্মস্পর্শী।
ইনট্রোতে বলা হয়েছে,
“যখন আপনি একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত এলাকায় বাস করবেন যেখানে মৃত্য প্রতিনিয়ত সবাইকে
তাড়া করে বেড়ায়। সেখানের ছবিটা অনেক ভিন্ন এবং সিদ্ধান্তটা অনেক কঠিন। আপনার
ভাগ্যকে এ যুদ্ধের স্থানে আপনার পরিবার পরিজন নিয়ে যুদ্ধের ছায়া থেকে বাঁচার
চেষ্টায় কল্পনা করুন।”
“সময় আপনার বিরুদ্ধে,
আপনার পরিবার ভীষণ বিপদে, কোথাও লুকানোর জায়গা নেই, কিছু করার নেই। শুধু বাসা থেকে
তাদেরকে নিয়ে বের হয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার একটি একটি হিরোচিত যাত্রার স্বপ্ন
দেখা!”
“সব স্থানে গুলি চলছে,
বোমা বর্ষণ হচ্ছে। এ অবস্থা আপনাকে গ্রাস করে নিবে যদি না আপনি দ্রুত সিদ্ধান্ত
নেন বিভিন্ন ঘটনা অতিক্রম করার সময়। এ ঘটনাগুলো খুবই সত্য এবং এ অবস্থা আপনাকে
কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। বাঁচো না হয় মরো!”
যে কয়টি
পুরস্কারের জন্য সিলেকশন পেয়েছে
২০১৬ সালের মে মাসে
গুগল প্লে স্টোরে আপলোড করা এ গেমসটি ইতিমধ্যে ৫ লাখের মতো ডাউনলোড ও ইন্সটল করা
হয়েছে। মাত্র ৪ মাসের মধ্যেই এ গেমসটি ৬টি অফিসিয়াল সিলেকশন, ২টি অ্যাওয়ার্ডের
জন্য নমিনেশন পেয়েছে। আর ভিজুয়্যাল এক্সিলেন্স এর জন্য রিবুট ডেভেলপ কর্তৃক এটি
ইন্ডি অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছে।
৬টি অফিসিয়াল
সিলেকশনগুলো হলো- ইন্ডিকোড ইউরোপ কর্তৃক ফেস্টিভাল সোকেস অফিসিয়াল সিলেকশন ২০১৬, এ
মেজ কর্তৃক জোহানেসবার্গ এক্সিবিশন অফিসিয়াল সিলেকশন ২০১৬, ক্যাজুয়াল কানেক্ট
কর্তৃক এশিয়ান সোকেস অফিসিয়াল সিলেকশন ২০১৬, কানাডার পিজিসি ব্যাঙ্কুভার কর্তৃক বিগ
ইন্ডি পিচ অফিসিয়াল সিলেকশন ২০১৬ এবং গেম হ্যাপিনেস কর্তৃক সোকেস অফিসিয়াল সিলেকশন
২০১৬।
২টি নমিনেশন হলো- ইন্ডি
প্রাইজ কর্তৃক বেস্ট গেম ন্যারিটিভ নমিনেশন ২০১৬ এবং বেস্ট ইন শো অ্যান্ড মোস্ট
ইনোভেটিভ গেম ক্যাটাগরিতে।
গেমসটির
নির্মাতা এবং বানানোর উদ্দেশ্য
গেমটি ডেভেলপ করার
জন্য যারা নিরলস চেষ্টা করেছে এবং সফল হয়েছে তারা হলেন-
গেম ডিজাইন,
প্রোগ্রামিং অ্যান্ড গেম ডিরেক্টর- রাশেদ আবু এইদেহ (ফিলিস্তিন)।
আর্ট অ্যান্ড
ইলাস্ট্রেশন- ওয়েদাদ ইরশাইদ (জর্দান)।
অ্যানিমেশন- সারাহ
সাওয়া (জর্দান)।
মিউজিক- কোল্ড (জর্জ
মেন্ডেজ)।
গেমসটি রাশেদ আবু
এইদেহ কেন তৈরি করেছেন তার একটা ব্যাখ্যাও তিনি দিয়েছেন তার ওয়েবসাইটে। তিনি বলেন,
“আমি দুই কন্যা সন্তানের পিতা। তাদের ছাড়া আমার জীবন আমি কল্পনা করতে পারি না।
কিন্তু ফিলিস্তিনে কেউ বিপদমুক্ত নয়।”
“যখন গাজায় যুদ্ধ শুরু
হলো তখন আমি লক্ষ্য করলাম কতো নিষ্পাপ শিশুরা তাদের পিতার কোলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ
করছে। আমি নিস্তব্ধ হয়ে গেলাম। আমার ভিতর এক দুঃখ, রাগ, ভয় ও মমত্ববোধের এক অদ্ভুত
মিশ্র অনুভূতি লক্ষ্য করলাম। আমার শুধু মনে হতে লাগলো, যদি এটা আমার সাথে ঘটতো।”
“আর এ অনুভূতিকে সম্বল
করেই গেমসের মধ্যে আমার অনুভূতিকে ঢেলে দিলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল আপনাদের জানানো
আমরা কিভাবে ফিলিস্তিনে বসবাস করছি। এটা শুধুমাত্র একটা গেমস নয়, এটা হলো একটি
মামলা এবং সাহায্যর জন্য আকুতি।”
ইউজার
রিভিউ আর রেটিং কেমন গেমসটির?
এখনো পর্যন্ত প্রায় ২১
হাজার ইউজার রিভিউ আর রেটিং পেয়েছে গেমসটি। তারপরেও রেটিংস ৪.৬ এ অবস্থান করছে
গুগল প্লে স্টোরে। এ রিভিউ গুলোর মধ্য থেকে শীর্ষ ৪টি রিভিউ এবং রেটিং আপনাদের
জন্য তুলে ধরা হলো।
আহমাদ এস- “অনেক আশাপ্রদ। গেমটি
বানাতে অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। ডেভেলপারের কাছ থেকে আরো ভালো কাজ আশা করি। তবে আসল
ঘটনাটি(গাজা যুদ্ধ) ছিল আরো ভয়ংকর।” তিনি এ গেমটিকে পাঁচে ৫ রেটিং দিয়েছেন।
লেইলা প্রিজমরিভার- “কাছাকাছি কিন্তু কোনো
ধোঁয়া ওড়েনি। এটা বেশ ভালো একটা গেম হতে পারতো। যদি এখানে দ্বিতীয় একটি চরিত্র অন্তর্ভূক্ত
করা যেতো। এটা সিভিলিয়ান পার্সপেক্টিভ থেকে দেখা, এখানে সৈন্য আনা উচিৎ ছিল।” তিনি
এ গেমটিকে পাঁচে মাত্র ১ রেটিং দিয়েছেন।
কাশিফ আহমেদ- “আপনাদের এটার
অভিজ্ঞতা অর্জন করা উচিৎ। পজিটিভ এবং এতে আসল একটা মেসেজ দেওয়া হয়েছে। সেটা অবশ্যই
হৃদয় বিদারক এবং চোখ খুলে দেওয়া মেসেজ। এটার ভিজ্যুয়াল ল্যাংগুয়েজ অনেক শক্তিশালী
এবং বিশ্বাসযোগ্য।” তিনি এ গেমটিকে পাঁচে ৫ রেটিং দিয়েছেন।
লাইকা রিন- “ফাইভ স্টার রেটিং
পাওয়ার দাবিদার। গল্প আর গ্রাফিকস দশে দশ। আমি খুশি যে এটা শুধুই একটা গেমস। কেননা
আমি আবার সেখান শুরু করতে পারি যেখানে গেমসের ক্যারেক্টারটিকে আমি মেরে ফেলি। কিন্তু
বাস্তবতায় আমি নিজেকে এই পরিস্থিতিতে মৃত দেখতে পাই।”
“জীবনটা খুবই
ক্ষণস্থায়ী। আমরা খুবই ভাগ্যবান যে আমাদের এ রকম দুঃস্বপ্নে বাস করতে হয় না।
যাইহোক, গেমসটি খুবই সেনসেটিভ। এটা খেলার জন্য নয়, আপনার হৃদয়ের জন্য। এটা দারুণ
একটা মাস্টারপিস।” তিনিও এ গেমটিকে পাঁচে ৫ রেটিং দিয়েছেন।
বিঃদ্রঃ- আমার এ লেখাটি বিডিইয়ুথ.কমে প্রকাশিত হয়েছিল। এটার কপিরাইট তাদেরই। আমি শুধু পোর্টফোলিও তৈরির জন্য অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করছি।
Comments
Post a Comment